নিউজ ফোর সাইড ডেস্ক :: আজ মীরাকে তার মা এবং মুম্বাই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হল এবং এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক ও মেম্বার সেক্রেটারি জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিট মাননীয় সুদীপ্ত বিশ্বাস মহাশয়, জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সারদা গিরি মহাশয়া এবং পিওআইসি সঙ্গীতা সাহু মহাশয়া।মাননীয় জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারীক সুদীপ্ত বিশ্বাস মহাশয় বলেন হোমে তাদের চিরকাল রাখা যায় না খোঁজ খবর করে বাড়ি ফেরাতে হয় সেই প্রক্রিয়া আজ সফল হল এবং শুধু বাড়ি ফেরানো নয়, যেটুকু সময় পাওয়া যায় হোমে রাখার জন্য সেই সময়কালে তাদের প্রতিভাগুলি খুঁজে তাকে বিকশিত করে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোই হোমের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে নিমতৌড়ি তমলুক উন্নয়ন সমিতি হোম কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীরা। সেজন্য তারা প্রশংসার দাবি রাখে।
দরিদ্র পরিবারে জন্মানো মেয়েটির লেখাপড়া শেখার কোন সুযোগ ছিল না। অপুষ্টি অনাহারে বেড়ে ওঠা মীরার বিয়ে হয় মাত্র ১৩ বছর বয়সে। অনাহারের তাড়নায় মীরা রোজকারের জন্য কাজ শুরু করে । রোড কন্ট্রাক্টারের অধীনে সামান্য পয়সার কাজ-তারপর ১৬ বছর বয়সে দুটি সন্তানের মা হয়ে ওঠা,রোজগার বাড়াতে হবে এই চিন্তায় প্রতিদিন কাজে আসা মীরাকে এমনই একদিন এক অচেনা মহিলা বলে ভিন রাজ্যে কাজে যাবে? প্রতিদিন অনেক টাকা পাবে,বাড়ির ছেলে মেয়েদের আনন্দে রাখতে পারবে ,তাদের লেখাপড়া শেখাতে পারবে। এই লোভে মীরা রাজি হয়ে যায় । নিজের জন্য নয় ,ছেলেমেয়েদের দুবেলা পুষ্টিকর খাওয়ার দিতে পারবে আর লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠাতে পারবে এই কথা ভেবে মীরা রাজি হয়ে যায় ।তারপর অচেনা মহিলার সঙ্গে একদিন ট্রেনে উঠে পড়ে ২০১৬ সালে। ট্রেনে আসতে আসতে মীরার মন খারাপ হয় বাড়িতে ফেলে আসা ছেলে-মেয়ে আর মায়ের জন্য। কোন এক স্টেশনে নেমে পড়ে উদ্ভ্রান্তের মতো নিজের বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে মেছাদাতে নেমে হাঁটতে হাঁটতে রাতের দিকে রামতারক এসে পৌঁছালে তমলুক থানার মোবাইল গাড়ির কার্যরত পুলিশের সন্দেহ হয় ।তারা তখন মীরাকে উদ্ধার করে নিমতৌড়ি তমলুক উন্নয়ন সমিতির জুভেনাইল জাস্টিস হোমে আনে ।তারপর হোম কর্তৃপক্ষ CWC র অর্ডার করিয়ে হোমে রাখে। শুরু হয় শারীরিক চিকিৎসা , মানসিক আর কাউন্সেলিং ।সঙ্গে সঙ্গে মিরার শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা ,কাউন্সিলিং করে জানা যায় মীরার বাড়িতে মা,ছেলেমেয়ে আছে। এবার বাড়ি ফেরানোর জন্য তোড়জোড় শুরু হল। মীরা বলতে থাকে বিহারে বাড়ি, বিহারের ধারোড, একমিনার মসজিদ,নাদেরপেড়। এই নামগুলো আলতো আলতো হিন্দিতে বলে ।তখন হোম এর ঈশিতা জানা,দেবশ্রী ত্রিপাটিরা পুলিশের সহায়তা নিয়ে মোবাইলের সাহায্যে বিহারের ওই জায়গাগুলো খুঁজতে থাকে ,কিন্তু না পেয়ে অন্যান্য রাজ্যে আছে কিনা খুঁজতে খুঁজতে একটি নাম পায়। তখন মহারাষ্ট্রের পুলিশের সাহায্য নিয়ে তল্লাশি শুরু করতে করতে হঠাৎ করে একদিন পারভনী জেলায় ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়। তারপর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ওরা জানায় ২০১৬ সালে ওখানে একটি মিসিং ডায়েরী হয়েছে মীরার নামে। তারপর মীরার ছবি পাঠানো হয়। সেখান থেকে চিনতে পারে ।হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটিকে এরপর বাড়ি ফেরানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়।ইতিমধ্যে মীরা হোম থেকে হাত সেলাইয়ের কাজ শিখে গেছে। শুধু সেলাই নয় , খেলাধুলোও মীরা খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করে ।স্পেশাল অলিম্পিকে NCC Floorball প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জ ছিনিয়ে আনে ।এর জন্য পঃবঃ সরকার মীরাকে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে সম্মানিত করে ২০২১ সালে। সব মিলিয়ে জীবন যুদ্ধে হারিয়ে গিয়েও হোমে এসে মীরা হারিয়ে যায়নি।
শারীরিক মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে নিজের উপার্জিত প্রায় ৭০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে পুত্র- কন্যার কাছে মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে মীরা হারনি গাইকোয়াড়। বাড়িতে ছেলে এখন চতুর্থ শ্রেণীতে আর কন্যা নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। মা বিমলা পান্ডুরাম গাইকোয়াড় দীর্ঘ ছয় বছর পরে মেয়েকে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি ।মীরা ফিরে গেলে নাতি নাতনি কে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠবে গরিব মীরার পরিবার। হোমের সুপার সঞ্চিতা গিরি জানান ,মীরা যখন হোমে আসে তখন শারীরিক মানসিকভাবে খুব বিধ্বস্ত ছিল ।প্রায় অসম্ভব ছিল ওকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু মীরার একটা গুন ছিল ।ও খুব মিশুকে আর পরিশ্রমী ।এই গুনগুলোকে সম্বল করে হোমের পুরো টিম আর জেলা প্রশাসনের চেষ্টা ও নির্দেশকে কাজে লাগিয়ে ওর দক্ষতা বৃদ্ধি করে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। এই সময়কালের সাফল্য আজকের মীরা। ও বাড়ি ফিরে যাচ্ছে মন খারাপ হলেও আমরা খুব খুশি ওর পরিবার পরিজনদের হাতে তুলে দিতে পেরে। এভাবেই সালমা, নাসিমা ,সোনিয়া ,পূজাদের বাড়ি ফেরানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মীরার সম্পর্কে জানান,হোমে এলে সুস্থ সবল করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে দক্ষতা বৃদ্ধি করে স্বনির্ভর করে বাড়ি ফেরানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য । সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে এতেই আমাদের আনন্দ ।
মীরার জন্য হোমের অন্য সব বন্ধুদের মনে বড় দুঃখ ,তবুও মীরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে এটাই আনন্দ।
No comments:
Post a Comment