নিউজ ফোর সাইড ডেস্ক :: চলচ্চিত্র জগতে অপরিপূর্ণ ঘাটতি সকলকে ছেড়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন "ফেলু মিত্তির" সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ ৪০দিনের লড়াইয়ের পর অবশেষে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে মানতে হলো বিধির বিধান। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও ডাক্তাররা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিলেন বাঙালি চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র কে পুনরায় বাড়ি ফেরানোর জন্য। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস হার মানতে হলো। ওনার প্রয়াণে শোকার্ত গোটা টলি দুনিয়া, পরিবার, বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ও অন্যান্যরা। তার প্রয়াণে চলচ্চিত্রজগতের এই অপরিপূর্ণ ঘরতি অনেকটাই পিছিয়ে রাখবে টলিউডকে এমন মন্তব্য করছেন অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী। তিনি সব সময় সবাইকে নিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন অভিভাবক হিসাবে তো কারুর বন্ধু হিসেবে তার সাথে কাজ করেছেন বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী আজ তারা অভিভাবক হারা হয়ে পড়লেন। নেপথ্য কণ্ঠে শোনা যাবে না সেইসব আবৃত্তি সেই সব কথোপকথন কিংবা কোনো সংলাপ। দাড়ি টেনে দিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অবসর নিলেন চলচ্চিত্র জগৎ জগত পৃথিবীর জগত থেকে ।
গত মাসেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জ্বর আসে হালকা করোনার উপসর্গ দেখা যায়। তড়িঘড়ি করে করোনা পরীক্ষা করা হলে তার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে। কলকাতার মিন্টো পার্কের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর চলে দীর্ঘ লড়াই টানা ৪০ দিন চিকিৎসকরা চিকিৎসার বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা করে গেছেন। কিন্তু আজ রবিবার ১২:১৫ নাগাদ ওই বেসরকারি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
করোনা চিকিৎসার জন্য প্লাজমা থেরাপিও করা হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে সেই সঙ্গে আরও অনেক রোগের লক্ষণ দেখা দেয় যা পরপর চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে চলে যায়। ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরপর শিথিল হয়ে পড়ে। তাই শুক্রবার অবস্থার অবনতি ঘটে। শনিবার সাস্থের উন্নতির তেমন কোন পাওয়া যায়নি। শনিবারই নার্সিংহোম এর পক্ষ থেকে বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হয় আসার জন্য। চিকিৎসকরা অনুমান করেছিলেন ব্রেন ডেথ হতে পারে সৌমিত্র বাবুর। উনার চেতনার স্তর তেমন কোনো সাড়া দিচ্ছিলো না উল্টো আরও অবনতির দিকে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ৮৫ বছর বয়সে জগত সংসার ছেড়ে চলে গেলেন ।
সৌমিত্র বাবু শুধু অভিনেতা তা নন একাধারে নাট্যকার, বাকচি শিল্পীও। প্রথম তিনি সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে রুপোলি পর্দায় পা দেন অপুর সংসার ছবিতে। সত্যজিৎ রায়ের প্রায় ১৪ টি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন । অপুর সংসার ছবিতে অপুর চরিত্রে অভিনয় করে নাম যশ করেছিলেন । তারপর সত্যজিৎ রায়ের সাথে হীরক রাজার দেশে, সোনার কেল্লা, অরণ্যে দিন রাত্রি, জয় বাবা ফেলুনাথ, ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে ছিল "জয় বাবা ফেলুনাথ" অন্যতম। পর পর তিনি হয়ে উঠেন "ফেলুদা"
২০১৪ সালে পদ্মভূষণে ভূষিত হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ২০১২ সালে ভারত সরকারের দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার , ২০১৭ সালে ফ্রান্স সরকার লিজিয়ন অব অনারে ভূষিত করেন। সেই সঙ্গে ২০১৭ সালের বঙ্গ বিভূষণে ভূষিত হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ তিনি সশরীরে বাঙ্গালীদের সম্মুখে না থাকলেও উনার স্মৃতি বাঙ্গালীদের মনে সারা জীবন থাকবে উনার অভিনীত ছবি নাটক সমস্তকিছুই বাঙালিরা মনে রাখবে।
No comments:
Post a Comment